“জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর”- স্বামী বিবেকানন্দের এই বিখ্যাত উক্তিটি আমাদের সবার জানা থাকলেও, কাজে কিন্তু আমরা ঠিক এর উল্টোটা করি। মানুষ, প্রাণীকুল এবং উদ্ধিদ জগৎ সব কিছু নিয়েই আমাদের এই পৃথিবীর ইকোসিস্টেম গঠিত। এগুলোর কোন একটার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেলে মানুষের অস্তিত্বও টিকে থাকবে না।
কথা বলতে না পারলেও প্রানিদেরও আবেগ-অনুভুতি রয়েছে, ওদের ও আছে নিরাপদ ভাবে বাঁচার অধিকার।
বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই এই ধরনের অমানবিক আচরণ এর বিরুদ্ধে আইন রয়েছে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ করা, সদয় আচরণ নিশ্চিত করা ও দায়িত্বশীল প্রতিপালনের মাধ্যমে প্রানীকল্যান নিশ্চিত করার লক্ষে ১৯২০ সালের The Cruelty to Animals Act, 1920 কে রহিত করে প্রানিকল্যান আইন ২০১৯ নামে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
আমি আজকের এই পোস্টে আপনাদের কে দেখাব প্রাণীদের প্রতি মানুষের কি ধরনের আচরণ অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং তার বিরুদ্ধে কি ধরেনর শাস্তির বিধান রয়েছে।
ধারা-২(১১) প্রাণী বলতে – মানুষ ব্যতীত সকল স্তন্যপায়ি প্রানি, পাখি, সরীসৃপ জাতীয় প্রানি, মাছ বাদে অন্য সকল জলজ প্রাণী এবং সরকার কতৃক গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঘোষিত কোন প্রানি কে বোঝাবে।
ধারা-৬- কোন ব্যক্তি যদি নিন্ম বর্নীত কোন কাজ করে তা প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ বলে গণ্য হবে-
১. এমন কোন কাজ করা বা করা থেকে বিরত থাকা, যার ফলে কোন প্রাণী অসুস্থ হয়ে যায়।
২. কোন প্রাণীকে দিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম করানো বা অপ্রয়োজনীয় কারণে প্রহার করা বা পেটানো।
৩. কোন প্রাণীকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাবার খেতে না দেওয়া কিংবা জোর করে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ানো
৪. কোন প্রাণীকে এমন জায়গায় রাখা যেখানে তার স্বাভাবিক ভাবে দাড়াতে বা বসতে বা শুয়ে থাকতে সমস্যা হয়।
৫. কোন প্রাণীকে লড়াই করার জন্য প্ররোচিত করা বা উত্তাক্ত করা বা টোপ হিসাবে ব্যবহার করা।
৬. কুকুরকে শরীরচর্চার জন্য কোনো প্রকার চলাফেরার সুযোগ প্রদান না করিয়া একটানা চব্বিশ ঘণ্টা বা ততোধিক সময় বেধে রাখা
৭. রাইফেল শ্যুটিং বা তীর ছোড়া প্রতিযোগিতায় কোনো প্রাণিকে লক্ষ্যবস্তু হিসাবে ব্যবহার করা হয় বা করিবার উদ্দেশ্যে ছাড়িয়া দেওয়া হয়
এছাড়াও আরো কিছু পয়েন্ট আছে আপনারা প্রয়োজনে একটু দেখে নিবেন।
ধারা- ৭- মালিকবিহীন প্রাণি নিধন বা অপসারণ
১) এই আইনে উল্লিখিত কোনো কারণ ব্যতীত, মালিকবিহীন কোনো প্রাণি নিধন বা অপসারণ করা যাইবে না।
২) কোনো ব্যক্তি মালিকবিহীন কোনো প্রাণি হত্যা করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে।
ধারা-৮ পরিবহন কাজে প্রাণির ব্যবহার
১) শারীরিকভাবে অনুপযুক্ত কোনো প্রাণিকে পরিবহন কাজে বাহক হিসাবে ব্যবহার এবং কোনো প্রাণির দ্বারা মাত্রাতিরিক্তি যাত্রী বা মালামাল বহন করানো যাইবে না।
ক) কোনো প্রাণিকে পরিবহন কাজে বাহক হিসাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে অনুপযুক্ত ঘোষণা করিবার পরও উক্ত প্রাণিকে উক্ত কাজে ব্যবহার; এবং
(খ) পরিবহন কাজে কোনো প্রণি দ্বারা মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বা মালামাল পরিবহন এই আইনের অধীনে অপরাধ বলে গণ্য হবে।
ধারা-৯ পোষা প্রাণির বাণিজ্যিক উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা নিবন্ধন
কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীনে নিবন্ধন ব্যতীত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পোষা প্রাণীর খামার পরিচালনা করিলে তা অপরাধ বলে গণ্য হইবে।
ধারা-১০ অঙ্গহানি
প্রাণির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে প্রাণিদেহের কোনো সংবেদনশীল টিস্যু অপসারণ করা হইলে বা অঙ্গ কর্তন করা হইলে অথবা শারীরিক কাঠামোর পরিবর্তন ঘটানো হইলে বা ঘটাইবার চেষ্টা করা হইলে অথবা উক্ত কাজে সহায়তা করা হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে।
ধারা-১১ বিষ প্রয়োগ
কোন ঔষধ বা খাবার বিষাক্ত বা ক্ষতিকর জানা সত্তেও কোন প্রাণীকে উক্ত খাবার খাওয়ানো বা খাওয়ানোর চেষ্টা করলে এবং তার ফলে প্রাণির মৃত্যু বা স্থায়ী অঙ্গহানি হয় অথবা স্বাভাবিক আকার ও কর্মক্ষমতা নষ্ট হইয়া যায়, তাহা হইলে উক্ত কার্য এই আইনের অধীন অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে।
ধারা- ১২ কলাকৌশল প্রদর্শনকারী প্রাণি
কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণ ব্যতীত, কোনো প্রাণিকে দৈহিক কলাকৌশল প্রদর্শনের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান বা দৈহিক কসরৎ প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করা যাইবে না।
ধারা-১৬ অপরাধ ও দণ্ড
কোনো ব্যক্তি এই আইনের-
(ক) ধারা ৬ এর উপ-ধারা (৩), ধারা ৭ এর উপ-ধারা (২), ধারা ৮ এর উপ-ধারা (২), ধারা ৯ এর উপ-ধারা (৩), ধারা ১২ এর উপ-ধারা (৬) এবং ধারা ১৩ এর উপ-ধারা (৩) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করিলে অথবা অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করিলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৬ (ছয়) মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ (দশ) হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন; এবং
(খ) ধারা ১০ এর উপ-ধারা (১) এবং ধারা ১১ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করিলে অথবা অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করিলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
১৮। কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ ব্যতীত, কোনো আদালত এই আইনের অধীন কৃত কোনো অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণ করিবেন না।
১৯। এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধসমূহ অ-আমলযোগ্য (Non-cognizable) এবং জামিনযোগ্য (Bailable) হইবে।
তো বন্ধুরা এই ছিল প্রানীকল্যান আইন ২০১৯ নিয়ে আলোচনা, আমি এই আইনের গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, সম্পূর্ণ আইন জানতে চাইলে এখান থেকে আইনটি ডাউনলোড করতে পারেন। দেখা হবে পরবর্তী পোস্টে, সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।
0 Comments