যদি কোন ব্যক্তির
শুধু মাত্র কন্যা সন্তান থাকে অর্থ্যাৎ কোন ছেলে সন্তান না থাকে তাহলে তার মৃত্যুর
পর তার সম্পত্তি কি ভাবে বন্টন করা হবে, একজন কন্যা থাকলে কি ভাবে বন্টন করা হবে, একাধিক
কন্য সন্তান থাকলে কিংবা তার স্ত্রী জীবিত থাকলে বা না থাকলে কি ভাবে বন্টন করা হবে
এই বিষয়টা নিয়ে অনেকের মধ্যেই কনফিউশন কাজ করে, অনেকেই এই বিষয়টা সম্পর্কে একটা পরিষ্কার
ধারণা চান। কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি শুধুমাত্র কন্যা সন্তান রেখে মারা যান তাহলে তার
সম্পত্তি যে ভাবে বন্টিত হবে তা আজকের এই লেখার মাধ্যমে আলোচনা করব। বিষয়টি ভালো ভাবে বোঝার এই লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
মৃত ব্যক্তি যদি পুরুষ হন তাহলে বন্টন হবে একরম এবং মৃত ব্যক্তি যদি মহিলা হন তাহলে বন্টন হবে অন্যরকম। তবে আমরা দেখব মৃত পুরুষ ব্যক্তির উত্তরাধিকার হিসাব।
মৃত ব্যক্তির যদি কোন সন্তান না থাকে, তাহলে তার স্ত্রী মোট সম্পত্তির ১/৪; চার ভাগের একভাগ পাবেন এবং বাকী অংশ আসাবা বা অবশিষ্ট ভোগীরা পাবে।
আসাবা কারা সেই বিষয়ে পরে আসছি।
মৃত ব্যক্তির যদি শুধু-মাত্র একটি মেয়ে থাকে এবং স্ত্রী থাকে, তাহলে তার মেয়ে পাবে মোট সম্পত্তির অর্ধেক ১/২ এবং স্ত্রী পাবেন ১/৮; আটভাগের একভাগ এবং অবশিষ্ট সম্পত্তি আসাবারা পাবেন
মৃত ব্যক্তির যদি দুইটি বা তার বেশি মেয়ে থাকে তাহলে তারা মোট সম্পত্তির ২/৩, তিন ভাগের দুই ভাগ পাবেন, স্ত্রী ১/৮ পাবেন এবং বাকী অংশ আসাবারা পাবেন।মৃত ব্যক্তির স্ত্রী ও যদি না থাকে, অর্থ্যাৎ শুধুমাত্র এক কন্য থাকে তাহলে কন্য কন্যার ৫০% এবং বাকী অংশ পাবে আসাবারা , দুই বা ততোধিক কন্য থাকলে তারা মোট সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ এবং বাকী সম্পত্তি পাবেন আসাবারা। এক্ষেত্রে স্ত্রী না থাকায় স্ত্রীর অংশ আসাবারা পাচ্ছেন।
আসাবা কারাঃ
মনে করুন মি.রহিম এখানে মূল চরিত্র, তিনি মারা গিয়েছেন এবং তার সম্পত্তি ভাগ হবে। এখানে প্রথম আসাবা হবে, রহিমের বাবা যদি জীবিত থাকেন তিনি, তিনি না থাকলে রহিমের ভাইয়েরা, তারা না থাকলে তার ছেলেরা, তারা না থাকলে রহিমের চাচারা, তার তা থাকলে রহিমের চাচাতো ভাইয়েরা আসাবা হবে।
উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরো ক্লিয়ার করে দিচ্ছি-
মনে করুন, মি-X, মোট ১০০ টাকার সম্পত্তি বা ১০০ টাকা রেখে মারা যান, তার একটি মাত্র মেয়ে এবং তার স্ত্রী জীবীত আছেন।
এক্ষত্রে সম্পত্তির বন্টন হবে মি. X এর স্ত্রী পাবেন মোট সম্পত্তির ১/৮; ৮ ভাগের ১ ভাগ, তার মেয়ে পাবেন ১/২; মোট সম্পত্তির অর্ধেক, এবং বাকী অংশ পাবেন আসাবা বা অবশিষ্ট ভোগীরা
অর্থ্যাৎ x এর স্ত্রী পাবেন ১২টাকা ৫০ পয়সা, তার কন্যা পাবেন ৫০ টাকা, এবং বাকী ৩৭.৫০ টাকা পাবেন আসাবারা। আসাবা আরবী শব্দ এর অর্থ অবশিষ্টভোগী।
এক্ষেত্রে আসাবা কারাঃ
মি. X এর বাবা যদি জীবিত থাকেন তাহলে তিনি পাবেন অবশিষ্ট ৩৭.৫০ টাকা। তিনি জীবীত না থাকলে X এর ভাই পাবেন, যদি একাধিক ভাই থাকে, তাহলে সমান ভাবে ভাগ হয়ে যাবে। ভাই জীবিত না থাকলে ভাইয়ের ছেলেরা অবশিষ্ট অংশ পাবেন।
যাদের কথা বললাম তাদের কেউ না থাকলে মি x এর চাচা বা চাচারা, এবং তারাও না থাকলে চাচাতো ভাইয়েরা অবশিষ্ট অংশ পাবেন।
কিন্তু মি x এর বোনেরা বা তাদের ছেলে-মেয়েরা আসাবা হবেন না বা এই অবশিষ্ট সম্পত্তি পাবেননা।
আবার; মি.X এর যদি স্ত্রী যদি জীবীত না থাকে, শুধু মাত্র একটি মেয়ে থাকে, তাহলে মেয়ে ১/২’ অর্থ্যাৎ সমুদয় সম্পত্তির অর্ধেক এবং বাকী অর্ধেক পাবেন আসাবারা।
আবার; মি.X এর যদি স্ত্রী এবং দুই মেয়ে থাকে তাহলে, দুই মেয়ে মিলে ৩ ভাগের দুই ভাগ, তাহলে স্ত্রী ১/৮ এবং অবশিষ্টাং আসাবারা পাবে।
বন্ধুরা আপনারা
যারা এত হিসাব-নিকাশ করে সম্পত্তির থেকে প্রাপ্য অংশ বের করার ঝামেলা নিতে চান না,
তারা চাইলে শুধু মাত্র সম্পত্তির পরিমান এবং উত্তরাধিকারদের তালিকা ইনপুট করে সফটওয়্যার
এর মাধ্যমে অটোমেটিক ভাবে কয়েক সেকেন্ডে কে কতটুকু সম্পত্তি পাবে তার হিসাব বের করে
প্রিন্ট করে নিতে পারেন। বিস্তারিত জানতে এই লেখার উপর ক্লিক করে সাবলাইম লিগ্যালের এই ভিডিয়োটি দেখে আসতে পারেন।
বন্ধুরা এই যে কন্য সন্তানের সম্পত্তির অধিকার নিয়ে এতক্ষণ যে আলোচনা করা হয়, তা কোন রাষ্ট্রীয় বা মানব সৃষ্ট আইন নয়। আমাদের দেশে যার যার পারসোনাল ল অর্থ্যাৎ ধর্মীয় আইনঅনুযায়ী সম্পত্তি বা উত্তরাধিকারদের অংশ বন্টন করা হয়, সে অনুযায়ী পবিত্র কুরআনে নারীদের সম্পত্তিতে অধিকার সম্পর্কে বলা আছে।
মেয়েকে কি আগেই দান করা যাবে
যে কেউ তার একমাত্র বা একাধিক মেয়েকে জীবিত থাকাকালীন অবস্থায় সম্পত্তি দান করে যেতে পারেন। তবে এ দান করতে হবে যথাযথ উপায়ে এবং দানের সব আইন শর্ত মেনে। ওপরের ঘটনার ক্ষেত্রে বলা যায় রকিবও তাঁর মেয়েকে ইচ্ছা করলে তাঁর পুরো সম্পত্তি দান করে যেতে পারেন। তবে এ দানের ক্ষেত্রে যে শর্ত অছে, তা অবশ্যই তাঁকে মানতে হবে। দানটি অবশ্যই ঘোষিত হতে হবে। দ্বিতীয়ত দানকৃত সম্পত্তি মেয়ের দখলে দিয়ে দিতে হবে বা হস্তান্তর করে দিতে হবে এবং দানের লিখিত দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, মি.x এর মেয়ে তো এখনো অপ্রাপ্তবয়স্ক। তাকে কি দান করা যাবে? এর উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ যাবে। তবে সম্পত্তির দখল মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরই হস্তান্তর করে দিতে হবে। তবে মেয়েকে সম্পত্তি দিয়ে দেওয়া মানে এ নয় যে, বাবা-মাকে সম্পত্তি ছেড়ে চলে যেতে হবে। বাবা-মা মেয়ের সঙ্গেই অবস্থান করতে পারবেন। আর মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলে যদিও মেয়ের নামে সম্পত্তি রয়েছে, তবু মেয়ের সম্পত্তিতে বাবা-মা বসবাস করতে আইনত কোনো বাধা নেই। আর মেয়েকেও খেয়াল রাখতে হবে বাবা-মায়ের দান করা সম্পত্তির মালিক হয়ে যেন বাবা-মাকে বঞ্চিত করা না হয়। বাবা-মাকে বঞ্চিত করলে বাবা-মারও অধিকার রয়েছে আইনের আশ্রয় নেওয়ার। অনেককেই বলতে শোনা যায়, মেয়েকে উইল করে যাবে। মনে রাখতে হবে মেয়েকে উইল করে গেলে পুরো সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল করা যাবে না। এর বেশি উইল করলে অন্যান্য উত্তরাধিকারীর সম্মতি লাগবে। আর উইল কার্যকর হবে উইলকারীর মৃত্যুর পর। কি ভাবে উইল বা ওছিয়ত করতে হয় তার বিস্তারিত জানতে এই লেখার উপর ক্লিক করে সাবলাইম লিগ্যালের এই ভিডিওটি দেখে আসতে পারেন।
অথবা এই লেখা টি পড়ে দেখতে পারেন
বন্ধুরা আজকের ভিডিও এ পর্যন্তই, দেখা হবে পরবর্তী ভিডিওতে, সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
3 Comments
মামাতো ভাইরা কি সম্পত্তি পাবে? আর মৃত ব্যাক্তির সৎভাই থাকলে সে কতটুকু অংশ পাবে?
ReplyDeleteআমরা তিন বোন আমাদের কোনো ভাই নেই। আমার বাবার কোনো ভাই নেই আমার দাদার ও কোনো ভাই বা বোন নেই। আমার বাবার একজন বোন আছে তার একজন ছেলে আছে। সেই ছেলে কি আমার বাবার সম্পত্তির অংশ পাবে?
ReplyDeleteঅনেক ভালো ইনফরমেশন জানতে পারছি।
ReplyDelete