বাংলাদেশের অলিতে গলিতে, আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক বেসকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা কিন্ডার গার্টেন স্কুল। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদ (বিকপ)এর তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে ৬৫ হাজারেরও বেশি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। ১৯৬২ সালের রেজিস্ট্রেশন অব প্রাইভেট স্কুল অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, ২০১১ সালে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা প্রণীত হয়, যার ফলে বৈধ ভাবে বেসকারি স্কুল পরিচালনা করতে গেলে প্রথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিতে হয়।আজকের এই ভিডিওতে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব, কি ভাবে একটা কিন্ডার গার্টেন স্কুলের নিবন্ধন নিতে হয়, কি কি শর্তপূরণ করা লাগে, কত টাকা খরচ হয় ইত্যাদি যাবতীয় বিস্তারিত বিষয় সম্পর্কে।
</br>
একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের নিবন্ধন তিনটি ধাপে সম্পন্ন করতে হয়। প্রথম ধাপে প্রথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রাথমিক অনুমতির জন্য আবেদন করতে হবে, প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়ার ১ বছরের মধ্যে অস্থায়ী নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হয়, অস্থায়ী নিবন্ধন পাওয়ার ৩ বছরের মধ্যে চূড়ান্ত পর্বে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। পাঁচ বছর পর নিবন্ধন নবায়ন করতে হবে।
Stage-1: প্রাথমিক অনুমতি
প্রাথমিক অনুমতির জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালকের কাছে আবেদন করতে হবে। [আবেদন পত্রের নমুনা আপনারা স্ক্রিনে দেখতে পাচ্ছেন ] এই ক্ষেত্রে আবেদন ফি মেট্রোপলিটন সিটি ও বিভাগীয় শহরে অবস্থিত বেসকারী পাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকা, জেলা সদরের ক্ষেত্রে তিন হাজার টাকা এবং উপজেলা সদর ও অন্যান্ন এলাকার ক্ষেত্রে দুই হাজার টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। উপপরিচালক তফসিলে বর্নীত স্কুলটি ৬০ দিনের মধ্যে সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন এবং আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া কাগজপত্র পরীক্ষা করে অধিদপ্তরে তাঁর মতামত পাঠাবেন। এরপর অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত মূল্যায়ন কমিটি সেই আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিক অনুমোদনের সুপারিশ করবে। মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ বিবেচনা করার পর নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়টিকে প্রাথমিক অনুমতি সনদ প্রদান করিবে। [প্রাথমিক অনুমতি সনদের ছবি আপনারা স্ক্রিনে দেখতে পাচ্ছেন] এই সনদের মেয়াদ হবে সনদ প্রদানের তারিখ হতে পরবর্তী ১ (এক) বছর।
Stage-2: অস্থায়ী নিবন্ধন
প্রাথমিক অনুমতি সদনপ্রাপ্ত বিদ্যালয়কে ১ বছরের মধ্যে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের নিকট অস্থায়ী নিবন্ধন পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। [আবেদন পত্রের একটি নমুনা আপনারা স্ক্রিনে দেখতে পাচ্ছেন] বেসকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী নিবন্ধনের জন্য মেট্রোপলিটন ও বিভাগীয় শহরের ক্ষেত্রে ৬,০০০=/ (ছয় হাজার) টাকা, জেলা সদরের ক্ষেত্রে ৪,০০০/= (চার হাজার) টাকা এবং উপজেলা ও অন্যান্ন এলাকার ক্ষেত্রে ৩,০০০=/ (তিন হাজার) টাকা ফি প্রদান করতে হবে।
আবেদন দাখিল করার পর নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শন করে ছাত্র-ছাত্রি ভর্তি, উপস্থিতি, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি চক্রের হার, সমাপনি পরীক্ষা এবং বৃত্তি পরিক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে অস্থায়ী নিবন্ধন সনদ পত্র প্রদান করিবে। অস্থায়ী নিবন্ধনের মেয়াদ হবে প্রাথমিক অনুমতির মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ার তারিখ হতে ৩ (তিন) বছর। [ অস্থায়ী সনদ পত্রের একটি নমুনা আপনারা ডিসপ্লেতে দেখতে পাচ্ছেন]
Stage-3: চূড়ান্ত নিবন্ধন
অস্থায়ী নিবন্ধন প্রাপ্তির পর ৩ (তিন) বছর অন্তিক্রান্ত হওয়ার ৬০ (ষাট) দিন পূর্বে চূড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করতে হবে। এই ক্ষেত্রে, স্কুলটি মেট্রোপলিটন এরিয়া বা বিভাগীয় শহরে অবস্থিত হলে ১২,০০০=/ (বার হাজার) টাকা, জেলা সদরে অবস্থিত হলে ৮,০০০=/ (আট হাজার) টাকা এবং উপজেলা বা অন্যান্ন এলাকায় অবস্থিত হলে ৬,০০০=/ (ছয় হাজার) টাকা নিবন্ধন ফি প্রদান করতে হবে। [আবেদন পত্রের ছবি আপনারা স্ক্রিনে দেখতে পাচ্ছেন] আবেদন দাখিল করার পর নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শন করে ছাত্র-ছাত্রি ভর্তি, উপস্থিতি, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি চক্রের হার, সমাপনি পরীক্ষা এবং বৃত্তি পরিক্ষার ফলাফল সহ যাবতীয় বিষয় বিবেচনা করে সন্তুষ্ট হলে ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে নিবন্ধন সনদ প্রদান করবে। [নিবন্ধন সনদের একটা ছবি আপনারা দেখতে পাচ্ছেন] কোন কারণে নিবন্ধন সনদ প্রদান না করার সিদ্ধান্ত নিলে, তা কারন সহ সাত কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত ভাবে আবেদনকারীকে জানাবে। এই বিধিমালা অনুযায়ী এই নিব্ধনের মেয়াদ ৫ (পাঁচ) বছর বলবৎ থাকবে। পাঁচ বছর পর নিবন্ধন নবায়ন করতে হবে।
নিবন্ধন নবায়ন
এই বিঁধিমালা অনুযায়ী নিবন্ধন ফি এর শতকরা ৫০% টাকা জমা দিয়ে এবং সকল শর্তাবলি প্রতিপালন সাপেক্ষে নিবন্ধন নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নবায়নের দরখাস্ত পাওয়ার পর ৬০ (ষাট) দিনের ভেতর আবেদন নিষ্পন্ন করে নবায়ন সদন প্রদান করবে, উক্ত সময়ের মধ্যে নবায়ন সনদ ইস্যু করতে না পারলে, ৬০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর অটোমেটিকালি নিবন্ধন সনদ পরবর্তী ৫ (পাঁচ) বছরের জন্য নবায়ন করা হয়েছে বলে গন্য হবে।
-----------------------------------------------------------------
একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল পরিচালনা করার জন্য এবং নিবন্ধন পাওয়ার জন্য এই বিঁধিমালা অনুযায়ী যে সকল শর্ত সমূহ পূরণ করা দরকার-
১। ম্যানেজিং কমিটি গঠন- বেসরকারী বিদ্যালয় পরিচালনা এবং এর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নয় সদস্যের একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকবে। [কে কে এই কমিটির সদস্য হবেন এবং কোন পদে থাকবেন তা আপনারা স্ক্রিনে দেখতে পাচ্ছেন।]
ব্যাবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ হবে ইহার প্রথম সভার তারিখ হতে পরবর্তী ৩ (তিন) বছর।
ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা এবং কার্যাবলি কি হবে তা আপনারা ডিসপ্লেতে দেখতে পাচ্ছেন।
২। তহবিল- প্রত্যেক বেসকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি সংরক্ষিত তহবিল এবং একটি সাধারণ তহবিল থাকতে হবে।
সংরক্ষিত তহবিলের পরিমান হবে-
· স্কুলটি মেন্ট্রোপলিটন এরিয়ার অবস্থিত হলে – এক লক্ষ টাকা
· জেলা সদরে অবস্থিত হলে- পচাত্তর হাজার টাকা
· উপজেলা সদর ও পৌরসভায় অবস্থিত হলে- পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং
· ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত হলে- পঁচিশ হাজার টাকা।
এই টাকা সঞ্চয় পত্র আকারে কিংবা কোন তফসিলি ব্যাংকে স্থায়ী আমাতন হিসাবে জমা রাখতে হবে। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ব্যতীত এই অর্থ উত্তোলন করা বা ভাঙানো যাবেনা।
সাধারণ তহবিলে যে সকল অর্থ জমা থাকবে তা হল-
· স্কুলের ছাত্র-ছাত্রিদের বেতন ভাতা হতে প্রাপ্ত অর্থ
· কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, বেসকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি প্রদত্ত অনুদান
· সরকার বা অন্যকোন সংস্থা হতে প্রাপ্ত অনুদান
· শিক্ষা কার্যক্রম ব্যতীত অন্যকোন কর্মকান্ড হয়ে আয় বা অন্য কোন উৎস হতে আয়
ছাত্র শিক্ষক অনুপাত
বেসকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র শিক্ষকের অনুপাত হবে ৩০:১
বেসকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমী ও ভবন
বেসকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজেস্ব মালিকানায় অথবা ভাড়ায়- মেট্রোপলিটন এলাকায় নূন্যতম ৮ শতাংশ, পৌরসভা এলাকায় নূন্যতম ১২ শতাংশ এবং অন্যান্ন এলাকার ক্ষেত্রে নূন্যতম ৩ শতাংশ ভূমী থাকতে হবে। উক্ত ভূমির উপর নূন্যতম ৩ হাজার বর্গফুটের কমপক্ষে ৬ কক্ষ বিশিষ্ট ভবন থাকতে হবে।
[A detailed screenshot needs to be added]
শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত পাঠ্যবই অথবা অন্যকোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত বা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষাক্রম অনুসরণ করিতে হইবে এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত যুগোপযোগী বই অন্তর্ভূক্ত করিতে পারিবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব বিরোধী এবং বাংলাদেশের স্বাংকৃতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থি কোন বই পুস্তক অন্তর্ভূক্ত করা যাবেনা।
· বিদ্যালয়ে শিশু বান্ধব পরিবেশ বজায় রাখা, খেলাধুলা ও স্বাংকৃতিক চর্চা, বৃক্ষরোপন, ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে।
· প্রত্যেকটি স্কুলে একটি লাইব্রেরি থাকতে হবে এবং সেখানে শিশুদের উপযোগি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কমপক্ষে ৫০০ টি বই থাকতে হবে।
· প্রত্যেক বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানি এবং ছাত্র ও ছাত্রিদের জন্য পৃথক পৃথক পর্যাপ্ত সংখক স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট থাকতে হবে।
· প্রতিটি স্কুলে বাধ্যতামূলক ফাস্টএইড বক্স সংরক্ষণ করতে হবে।
· ইংরেজি ভাষা ও তথ্য প্রযুক্তির উপর গুরুত্ব দিতে হবে, খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে, শিক্ষা-সফর ও বনভোজনের আয়োজন করতে হবে, বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করতে হবে।
মোটামুটি এই কাজগুলো করে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। নিবন্ধন পাওয়ার পর চাইলে আপনি বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য হতে পারেন। যেমন- বাংলাদেশে কিন্ডার গার্ডেন ওনার্স এসোসিয়েশন, এদের সদস্য ফি
২,০০০ ৳ এবং বার্ষিক নবায়ন ফি ১,০০০৳ ; এছাড়াও আছে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্ডেন ঐক্য পরিষধ, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন পরিচালক ঐক্য পরিষধ ইত্যাদি। আমি ভিডিও ডিসক্রিপশনে লিংকদিয়ে দিব।
বন্ধুরা এই ছিল বেসকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন নীতিমালা ২০১১ এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের বিস্তারিত আলোচনা, আপনারা যারা কিন্ডারগার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ডিটারমাইন্ড তারা ভিডিও ডিস্ক্রিপশনে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এই নিতিমালার গেজেট প্রজ্ঞাপনটি ডাউনলোড করে ভালো করে পড়ে নিতে পারেন।
বন্ধুরা দেখা হবে পরবর্তী ভিডিওতে, সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
0 Comments