বাংলাদেশের আইনে আত্নরক্ষার অধিকার বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার | Right to self defense according to Bangladeshi Law

Header Ads Widget

Latest

6/recent/ticker-posts

বাংলাদেশের আইনে আত্নরক্ষার অধিকার বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার | Right to self defense according to Bangladeshi Law

 


Right to self-defense । আত্নরক্ষার অধিকার

আত্ন রক্ষার অধিকার বলতে কি বোঝায়?

আত্মরক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রত্যেকেটা মানুষের জন্মগত অধিকার। একজন ব্যক্তি তার শরীর ও সম্পদের নিরাপত্তার অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে কোনো কাজ করলে তা আত্মরক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অন্তর্ভুক্ত হবে। দুনিয়ার কোন আইনে কিন্তু এটা বলা নাই যে কেউ আপনাকে মারার জন্য আসবে এবং আপনি সেটা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবেন না। আইনানুযায়ী ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগকালে কোনো কাজ করা হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না।

বাংলাদেশের আইনে আত্ন রক্ষার অধিকার বলতে কি বোঝায়?

দন্ডবিধি ১৮৬০ এর চতুর্থ অধ্যয় এর সাধারন ব্যতিক্রমসমূহ অর্থাৎ ৯৬ থেকে ১০৬ ধারা পর্যন্ত ব্যক্তিগত আত্নরক্ষার অধিকার এবং সম্পত্তি রক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে।

এর মধ্যে ৯৬ থেকে ১০২ ধারা পর্যন্ত ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার বিষয়ে এবং ১০৩ থেকে ১০৬ ধারা পর্যন্ত সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অধিকার বিষয়ে আলচনা করা হয়েছে।

-----------------------------

৯৬ ধারায় বলা হয়েছে- ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার জন্য কোন অধিকার প্রয়োগ করে থাকলে, আপনার কৃত কোন কাজই অপরাধ বলে গণ্য হবে না।

৯৭ ধারায় রয়েছে, ৯৯ ধারার ব্যতিক্রমগুলো বাদ দিয়ে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এমন যে কোনো অপরাধের বিরুদ্ধে নিজের ও অন্যের শরীর রক্ষার অধিকার আপনার আছে।

প্রথমত- নিজের বা অপরের শরীরকে কোন অপরাধের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কৃত কোন কাজ অপরাধ হবে না।

দ্বিতীয়ত- নিজের এবং অপরের সম্পত্তিকে চুরি, দস্যুতা, অনিষ্টসাধন বা অপরাধ মূলক অনধিকার প্রবেশের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োগ কৃত কাজ আত্নরক্ষার অধিকার বলে গণ্য হবে।

৯৯ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারিভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি অথবা তার নির্দেশে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো ব্যক্তি যদি in good faith বা সরল বিশ্বাসে কোনো কাজ করে সেই ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আপনার ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে না।

যেমন- কোন পুলিশ অফিসার কোর্ট কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার জন্য গেল এবং তার পরিচয় দিয়ে ওয়ারেন্ট দেখিয়ে আসামিকে গ্রেফতারের জন্য উদ্যত হলে, আসামি পলায়ন করার চেষ্টা করল, তখন পুলিশ তাকে থামানোর জন্য আঘাত করল বা বল প্রয়োগ করলে এই কার্যের বিরুদ্ধে আত্ন-রক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না।

এমনকি এই ক্ষেত্রে সামান্য আইনগত ভুল-ত্রুটি থাকেলেও আত্ন রক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না। যেমন- ওয়ারেন্টে বা গ্রেফতারী পরোয়ানায় আদালতের সীল-মোহর মিসিং আছে।

তবে এই ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু কিংবা গুরুতর শারীরিক জখমের ঝুঁকি থাকলে তখন আত্মরক্ষার অধিকার থাকবে। যেমন পুলিশ গ্রেফতার করতে গেলে যদি আইনের কিছুটা লঙ্ঘনও করে বসে তাও আপনি পুলিশকে বাধা দিতে পারবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না ওই পুলিশ মৃত্যু বা গুরুতর জখম ঘটানোর পর্যায়ে যায়।
আর যদি আসন্ন বিপদ ঠেকাতে আপনার সরকারের আশ্রয় নেওয়ার সময় থাকে তখনও আপনি আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না।

যেমন ধরুন- কোন একটা ইস্যু নিয়ে একদল ছাত্র শাহবাগ চত্বরে মানব বন্ধন করছে এবং তারা খবর পেল অপর একটি গ্রুপ ফার্মগেইট এলাকা থেকে লাঠিসোটা নিয়ে তাদের উপর হামলা চালানোর জন্য আসছে, তখন শাহবাগের আন্দলনরত ছাত্ররাও যদি লাঠিসোটা নিয়ে অপ্ররগ্রুপকে প্রতিহত করার জন্য যায়, তাহলে এটা আত্নরক্ষা হিসাবে গণ্য হবে না, কারণ শাহবাগ চত্বর থেকে ২ মিনিটের দূরত্বে শাহবাগ থানা রয়েছে, তারা সেখানে গিয়ে পুলিশের সহায়তা নিতে পারত।

এই অধিকার আপনি আত্মরক্ষার জন্য যতটুকু প্রয়োজন কোন অবস্থায়ই তার অতিরিক্ত প্রয়োগ করতে পারবেন না।

যেমন আপনি চুরি ঠেকাতে গিয়ে চোরকে খুন করতে পারেন না। এমন কিছু করলে এর জন্য আপনাকে আইনে নির্ধারিত শাস্তি পেতে হবে। সো বি কেয়ারফুল!

ধারা- ১০০ । কোন কোন ক্ষেত্রে আত্নরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে স্বেচ্ছ্বাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানো যায়?

৯৯ ধারার ব্যতিক্রম সাপেক্ষে, ৬ টি ক্ষেত্রে আত্নরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে একজন ব্যক্তি (vouluntarily) বা স্বেচ্ছ্বায় হামলাকারীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে-

১. নিজের নিশ্চিত মৃত্যু ঠেকাতে

২. মারাত্মক আঘাত থেকে রক্ষা পেতে যেখানে পরবর্তীতে আপনার মৃত্যু হতে পারে এমন সম্ভাবনা রয়েছে

৩. ধর্ষণ থেকে বাঁচতে

৪. Unnatural lusts বা অস্বাভাবিক কাম লালসার হাত থেকে রক্ষা পেতে

৫. অপহরণের হাত থেকে রক্ষা পেতে

৬. কেউ যদি আপনাকে এমন ভাবে আটক করতে পারে বলে মনে হয় যেখান থেকে আপনি সরকারী কর্তৃপক্ষের যেমন পুলিশ এর কাছ থেকে আর কোন সাহায্য নিতে পারবেন না।

-------------------------------------------------------------------------------------------------

ধারা- ১০১

১০০ ধারায় যে ৬ টি গ্রাউন্ড উল্লেখ করা হয়েছে, সে গুলো বাদে অন্যান্ন ক্ষেত্রে আত্নরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে vouluntarily আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটানো যাবে না, তবে মৃত্যু ব্যতীত অন্য যে কোন হানি ঘটানো যায়।

ধারা- ১০২-

শরীরের উপর হামলার ক্ষেত্রে কখন আত্নরক্ষার অধিকার শুরু হয় এবং কতক্ষণ পর্যন্ত বলবৎ থাকে-

যেই মুহুর্তে অপরাধ প্রচেষ্টা বা ভীতি প্রদর্শনের ফলে শরীর বিপন্ন হওয়ার যথাযত আশংকা দেখা দেয়, অপরাধ টি ঘটুক বা না ঘটুক তখন থেকে আত্নরক্ষার অধিকার জন্ম নেয়।

এই অধিকার অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার দেহ বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। আশঙ্কা কেটে যাওয়ার পর ঐ অধিকার আর আপনি পাবেন না।

---------------------------------------------------------------------------------------------------

১০৩ ধারায় উল্লেখ আছে কখন আপনি সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে কারো মৃত্যু ঘটাতে পারবেন-

৯৯ ধারার ব্যতিক্রম সাপেক্ষে একজন ব্যক্তি ৪ টি ক্ষেত্রে আত্নরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যায়-

১. দস্যুতা

২. House breaking by night বা রাত্রিবেলা গৃহ ভেঙ্গে প্রবেশ

৩. বাসগৃহ, তাঁবু, জাহাজ- যেখানে মানুষ বসবাস করে বা মাল জিনিস রাখা হয় তাতে আগুল লাগিয়ে ক্ষতি করায় চেষ্টা করলে বা করার চেষ্টা করলে।

৪. এছাড়াও চুরি, অনিষ্ট বা ঘরে অনধিকার প্রবেশের ক্ষেত্রে যদি এমন কোন অবস্থার উদ্ভব হয় যে সেখানে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা না হলে কারো মৃত্যু বা গুরুতর আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

চুরি, ক্ষতি বা অনধিকার প্রবেশ যদি উল্লিখিত উপরের মত ভয়ংকর না হয় তবে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুষ্কৃতিকারীর অন্য কোন ক্ষতি করা গেলেও মৃত্যু ঘটানো যাবে না। ১০৪ ধারায় এই কথা বলা আছে।

১০৫ ধারায় আছে, কখন কারো সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে এই অধিকারের শুরু হয় এবং কতক্ষণ পর্যন্ত এই অধিকার অব্যাহত থাকবে। যেমন কারো সম্পত্তির ক্ষেত্রে ক্ষতির আশংকা দেখা দেওয়ার সাথে সাথে প্রতিরক্ষার অধিকার শুরু হবে। চুরির ক্ষেত্রে চোর পালিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত বা সরকারী কর্তৃপক্ষের সাহায্য লাভ না করা পর্যন্ত অথবা ঐ সম্পত্তি উদ্ধার না করা পর্যন্ত আপনার প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে। দস্যুতার ক্ষেত্রে দস্যুর দ্বারা কোন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানো বা আঘাত করা বা অবৈধ অবরোধের চেষ্টা অব্যাহত থাকা পর্যন্ত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে। অনধিকার প্রবেশ বা অনিষ্ট সাধনের ক্ষেত্রে এর চেষ্টা অব্যাহত থাকা পর্যন্ত আর রাতের বেলা চুরির ক্ষেত্রে যতক্ষণ পর্যন্ত ঘরে কারো অনধিকার প্রবেশ অব্যাহত থাকবে আপনার ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার ততক্ষণ পর্যন্ত থাকবে। চোর চুরি করে চলে যাওয়ার পর আপনার আর ঐ অধিকার থাকবে না।

---------------------------------------------


______________________________________

সবশেষে, আপনার মৃত্যু হতে পারে এমন কোন আক্রমনে আত্মরক্ষা করতে গিয়ে যদি কোন নিরাপরাধ মানুষেরও ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে তাহলেও আপনি এমন ঝুঁকি নিয়ে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। যেমন আপনি নিজেকে বাঁচাতে কোন কোন উচ্ছৃঙ্খল জনতার উপর গুলি চালাতে পারেন। যদি ঐ জনতার ভেতরে থাকা কোন শিশুও যদি আহত বা নিহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে তবে তার জন্য আপনি দায়ী হবেন না আর এই নিয়ম উল্লেখ আছে ১০৬ ধারায়।

সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ এর ১০৫ ধারায় বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন কাজ করে যা দন্ডবিধিতে উল্লেখিত সাধারণ ব্যতিক্রম বা অন্যকোন ব্যতিক্রমের আওতায় পড়ে তা হলে তা প্রমাণের দায় ভার ঐ ব্যক্তির উপর বর্তায়।

সুতরং কোন ব্যক্তি যদি কারো মৃত্যু ঘটানোর পর দাবী করে যে আত্নরক্ষার জন্য সে এই কাজ করেছে তাহলে তাকেই এটা প্রমাণ করতে হবে।

অনেকেই নিজের আত্নরক্ষার জন্য বন্দুক বা আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করে থাকে, কি ভাবে একজন বাংলাদেশী নাগরিক হিসাবে আপনি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স করতে পারেন তার বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করে Sublime Legal এর এই ভিডিওটিদেখতে পারেন।

আশা করি এই পোস্টটি থেকে আপনারা একটা সম্যক ধারনা পেয়েছেন…… কখন এবং কোন পরিস্থিতিতে কতটুকু আত্নরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যায়। কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হলে বা  কোন কিছু ভুল মনে হলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন, ধন্যবাদ!

 

Post a Comment

0 Comments