Special Marriage Act | বিশেষ বিবাহ আইন | ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করার নিয়ম | ধর্ম মতের বাইরে বিয়ে | বিদেশী নাগরিক বিয়ে করার নিয়ম

Header Ads Widget

Latest

6/recent/ticker-posts

Special Marriage Act | বিশেষ বিবাহ আইন | ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করার নিয়ম | ধর্ম মতের বাইরে বিয়ে | বিদেশী নাগরিক বিয়ে করার নিয়ম

 


মনে করুন একজন মুসলমান ছেলে এবং একজন হিন্দু বা খ্রিষ্টান মেয়ের মধ্যে বিয়ে হবে, অর্থ্যাৎ ভিন্ন ধর্মের দুইজন মানুষ বিয়ে করতে চায় এবং কেউই বিয়ের জন্য তার ধর্ম পরিবর্তন করতে চায় না। প্রত্যেকটা মানুষের বিবাহ তিনি যেই ধর্ম অনুসরণ করেন, সে মোতাবেক হয়ে থাকে, কিন্তু ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করলে সেই বিবাহকে বিশেষ বিবাহ বলে। বাংলাদেশে বিশেষ বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ বিবাহ আইন, ১৮৭২ অনুযায়ী। কোন ভিন্ন ধর্মী বিদেশি নাগরিক এবং বাংলাদেশী নাগরিকের মধ্যে বিয়েও এই বিশেষ বিবাহ আইন অনুযায়ী হয়ে থাকে। কিন্তু এ বিয়ে কাদের জন্য প্রযোজ্য, বিয়ে অনুষ্ঠানের শর্তাবলি কী, সম্পাদনের পদ্ধতি কী, কার দ্বারা এ বিয়ে সম্পাদিত  হবে, এ বিয়ের ফলে জন্ম নেওয়া সন্তান কোন ধর্মের পরিচয়ে বড় হবে, এ বিয়ের স্বামী বা স্ত্রী কোন ধর্ম অনুসরণ করবেন, যাবতীয় বিষয় আমি আজকের এই ভিডিয়োতে আলোচনা করব।

বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ে করতে হলে ছেলে ও মেয়েকে অবিবাহিত থাকতে হবে। ছেলের বয়স কমপক্ষে ২১ বছর এবং মেয়ের বয়স ১৮ বছর হতে হবে। পক্ষগ প্রথমে বিশেষ বিবাহ নিবন্ধকের কাছে গিয়ে যেকোনো এক পক্ষ অপর পক্ষের কাছে বিয়ের জন্য লিখিত নোটিশ পাঠাবে। নিয়ম হচ্ছে, এ নোটিশ দেওয়ার ১৪ দিন পর বিয়ে সম্পাদন করতে হবে। এক পক্ষ নিবন্ধকের মাধ্যমে বিয়ের ১৪ দিন আগে অপর পক্ষকে নির্ধারিত আকারে নোটিশ না পাঠালে বিয়ে সম্পন্ন করা যাবে না। বিয়ের সময় অন্তত তিনজন সাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে। পাত্রপাত্রী সশরীরে উপস্থিত থেকে বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। বিয়েটি অবশ্যই বিশেষ বিবাহ নিবন্ধকের উপস্থিতিতে সম্পন্ন করতে হবে। আইন-মন্ত্রনায়লয় কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত অনেক স্পেশাল ম্যারিজ রেজিস্ট্রার আছেন, অনেক এডভোকেটও স্পেশাল ম্যারিজ রেজিস্টার হিসাবে তালিকাভুক্ত, বিয়ে সম্পন্ন হলে নিবন্ধক তা সরকারি ভলিউমে নিবন্ধন করবেন এবং একটি ম্যারিজ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট প্রদান করবেন। 

হলফনামাঃ

এই বিশেষ বিয়ের জন্য ছেলে-মেয়ে উভয়কে একটা হলফনামা দিতে হবে যে, তারা কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন না। এই হলফনামা টি নোটারি পাবলিক দিয়ে সত্যায়িত করে নিয়ে স্পেশাল ম্যারিজ রেজিস্টারের নিকট যেতে হবে। এই হলফনামা ছাড়া বিশেষ বিবাহ সম্পন্ন হবে না। এখন এই হলফ নামার অর্থ কিন্তু এটা না যে তারা তাদের ধর্ম বিশ্বাস ত্যাগ করে নাস্তিক হয়ে গেল, এই হলফনামার অর্থ হল, শুধুমাত্র বিবাহের ক্ষেত্রে তারা তাদের ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী বিয়ে করবেন না।

বাংলাদেশে প্রচলিত বিশেষ বিবাহ আইনে কেন এমন অদ্ভুদ বিধান রয়েছে, কেন এইআইন অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও অনেকে জটিলতা রয়েছে এবং কেন প্রায় দেড়শ বছর আগের এই আইনটি পরিবর্তন করা হচ্ছেনা তা আমার বোধগম্য নয়।

অন্যদিকে UDHR (Universal declaration of human Rights) বা জাতীসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ- ১৯৪৮ এর ১৬ নম্বর আর্টিকেলে বলা আছে- দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষের পারস্পারিক সম্পতিতে বিবাহ করার বা বিবাহ বিচ্ছেদ করার এবং পরিবার গঠনের অধিকার রয়েছে। এক্ষেত্রে ধর্ম, বর্ণ, বয়স, জাতীয়তা কোন কিছুই বাধা হবে না।

বিবাহবিচ্ছেদ ও উত্তরাধিকার

বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ে হলে স্বামী বা স্ত্রী চাইলেই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারবেন না। এ আইন অনুযায়ী কোনো পক্ষ বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে চাইলে তাকে ১৮৬৯ সালের ডিভোর্স অ্যাক্ট অনুযায়ী এই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে হবে। এর জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে এবং আদালতের অনুমতিক্রমে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে হবে। অন্যথায় বিবাহবিচ্ছেদের নামে একটি হলফনামা পাঠিয়ে দিলেই বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যাবে, সেটি বলা যাবে না।

আদালতের অনুমতি ছাড়া বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন করতে চাইলে অপর পক্ষ তা চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। এই আইনে যাঁরা বিয়ে করবেন, তাঁদের এবং তাঁদের সন্তানদের সম্পত্তি সাকসেশন অ্যাক্ট, ১৯২৫ অনুযায়ী বন্টিত হবে।

বিয়ে নিয়ে বিরোধ

এ আইনের অধীন বিয়ে-সংক্রান্ত এবং বিয়ের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কোনো বিরোধ দেখা দিলে দেওয়ানি আদালতে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ আছে। এ ছাড়া কেউ যদি দ্বিতীয় বিয়ে করেন কিংবা বিয়ে নিয়ে প্রতারণা করেন, তাহলে সে ক্ষেত্রে দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে। যৌতুক কিংবা বিয়ে-সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের অপরাধবিষয়ক আইন অন্যদের ক্ষেত্রে যেভাবে প্রয়োগ হবে, বিশেষ বিয়ের দম্পতির ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য হবে।

এই বিয়ের ফলে স্বামী-স্ত্রী যে যার ধর্ম পালন করতে পারবে, কাউকে জোর করা যাবে না। এবং পরবর্তীতে তাদের সন্তানেরা চাইলে তারা যেই ধর্মে বিশ্বাস করে সেই আইনানুযায়ী বা উত্তরাধিকার আইন ১৯২৫ অনুযায়ী সম্পত্তি পাবে।

এই বিশেষ বিবাহ আইন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিবাহ বিচ্ছেন আইন ১৮৬৯ এবং উত্তরাধিকার আইন ১৯২৫ আমার কাছে পারছোনালি অনেক কনফিউজিং এবং উইয়ার্ড লেগেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এই ধরনের বিবাহ কি ভাবে হবে, এর বিচ্ছেদ কি ভাবে হবে এবং পরবর্তীতে এই সংক্রান্ত সম্পত্তি উত্তরাধিকারদের মাঝে কি ভাবে বন্টিত হবে, তা নিয়ে সুস্পষ্ট এবং যুগোপযোগী একটা আইন প্রণয়ণ করা এখন সময়ের দাবী। সম্পূর্ণ আইনটি ডাউনলোড করতে পারেন এখানে ক্লিক করুন

বন্ধুরা আজকের লেখা এ পর্যন্তই। ইনশাল্লাহ দেখাহবে পরবর্তী পোস্টে, সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।


Post a Comment

0 Comments