মানহানি মামলা || suit of defamation || মানহানি মামলা করার নিয়ম | কখন কি ভাবে মানহানি হয়?

Header Ads Widget

Latest

6/recent/ticker-posts

মানহানি মামলা || suit of defamation || মানহানি মামলা করার নিয়ম | কখন কি ভাবে মানহানি হয়?

 

মনে করুন কেউ উদ্দেশ্যমূলক ভাবে আপনার সুনাম নষ্ট করতে মানুষের কাজে আজে-বাজে মন্তব্য করছে, কুৎসা রটাচ্ছে বা আপনার সম্পর্কে মিথ্যা অবমাননাকর তথ্য ছড়াচ্ছে অর্থ্যাৎ আপনার মানহানি করছে। এখন আপনি মানহানির মামলা করতে চান।

কি এই মানহানি মামলা, কি ভাবে এই মামলা দায়ের করতে হয়? কি প্রতিকার পাওয়া যায়, তার বিস্তারিত আমরা আজকের এই ভিডিওতে আলোচনা করব।

মানহানি কি?

মানহানি শব্দের অর্থ হল অবমাননা করা, অমর্জাদা করা। কারো সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে বা কুৎসা রটনা করে তার সুনাম,সুখ্যাতি নষ্ট করা।

মানহানি কি ভাবে করা যায়?

মৌখিক, লিখিত,চিহ্ন বা প্রতিক, ছবি, ভিডিও, অডিও, অনলাইনে বা অন্যন্ন বিভিন্ন উপায়ে মানহানি করা যায়।

কখন মানহানি হবে আর কখন হবে না

দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪৯৯ ধারায় মানহানির সংজ্ঞা দেওয়া আছে-



 

কোন ব্যক্তি অন্য আরেকজন ব্যক্তির সুনাম বা খ্যাতি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা সুনাম নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে জানা সত্তেও উদ্দেশ্যমূলক ভাবে

যদি মৌখিক ভাবে কোন বক্তব্য প্রদান করে, কোন কিছু লিখে বা অঙ্কন করে বা কোন চিহ্ন বা প্রতিকের মাধ্যমে, কিংবা কোন দৃশ্যমান উপস্থাপনার মাধ্যমে কোন নিন্দা প্রকাশ করে তাহলে ঐ ব্যক্তির মানহানি করেছে বলে গন্য করা হবে।

এমনকি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে বললেও তা মানহানি হবে। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন মানহানির অভিযোগ আনতে পারবেন। কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধেও মানহানিকর কিছু বললে বা প্রকাশ করলেও তা মানহানির
অপরাধের পর্যায়ে পড়বে।

তবে একটি মানহানিকর কার্য তখনি অপরাধ বলে গন্য হবে যখন বক্তব্যটি বা প্রকাশনাটি সংশ্লিষ্ট মানুষটিকে নৈতিক ভাবে হেয় করে বা তার চরিত্রকে নিচু করে।



তবে কিছু ব্যতিক্রম অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, যখন কোনো ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির নামে মানহানিকর কিছু বললে, লিখলে বা প্রচার করলেও মানহানি হবে না। যেমন:

১. জনগণের কল্যাণে কারও প্রতি সত্য দোষারোপ করলে মানহানি হবে না।

২. সরকারি কর্মচারীর সরকারি আচরণ সম্পর্কে সৎ বিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করলে তা মানহানির শামিল হবে না।

৩. সরকারি বিষয়-সংশ্লিষ্ট প্রশ্নে কোনো ব্যক্তির আচরণ নিয়ে মত প্রকাশ করলে মানহানি নয়।

৪. আদালতসমূহের কার্যবিবরণী প্রতিবেদন প্রকাশ করা মানহানির অন্তর্ভুক্ত হবে না।

৫. যেকোনো জনসমস্যা সম্পর্কে ও কোনো ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে সৎ বিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করা মানহানির শামিল নয়।

৬. আদালতে সিদ্ধান্তকৃত মামলার দোষ, গুণ বা সাক্ষীদের সম্পর্কে বা অন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আচরণ সম্পর্কে অভিমত মানহানির পর্যায়ে পড়বে না।

৭. গণ-অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানাদি সম্পর্কে কোনো মতামত দেওয়া মানহানি নয়।

৮. কর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তির কাছে সৎ বিশ্বাসে কারো সম্পর্কে অভিযোগ করা হলে সেটিও মানহানি হবে না। যেমন: পুলিশের কাছে কারো ব্যাপারে সৎ বিশ্বাসে অভিযোগ।

৯. কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার বা অন্য কারো স্বার্থ রক্ষার্থে দোষারোপ করা মানহানি নয়।

১০. জনকল্যাণার্থে সতর্কতা প্রদানের উদ্দেশ্যে কারো সম্পর্কে কিছু বলা হলে মানহানি হবে না। 

মামলা করার পদ্ধতি

বাংলাদেশে আইনে মানহানি একই সঙ্গে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি অপরাধ। দণ্ডবিধিতে মানহানির ফৌজদারি মামলা করতে হয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। আর ক্ষতিপূরণ চেয়ে দেওয়ানি মামলা করতে হয় সিভিল কোর্টে।

তবে দেওয়ানী মামলা করলে ক্ষতিপূরণের টাকার দাবির বিপরীতে নির্দিষ্ট অঙ্কের কোর্ট ফি দিতে হয়, যার সর্বোচ্চ পরিমাণ ৫৫-৬০ হাজার টাকা।

মানহানি মামলায় সরাসরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় না। সমন দেওয়ার পর আদালতে হাজির না হলে অথবা আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন না করতে তখন গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়। এ মামলার  বিচারপদ্ধতি দেওয়ানি মোকদ্দমার মতোই। মামলায় বাদী জয়ী হলে বিবাদী থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থ আদায় করতে পারেন।

মান হানির শাস্তি-

দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মানহানির শাস্তি বর্ণনায় বলা হয়েছে, এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই বছর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ড হতে পারে। ৫০১ ও ৫০২ ধারা অনুসারে, মানহানিকর বলে পরিচিত বিষয় মুদ্রণ বা খোদাইকরা এবং মুদ্রণ বা খোদায় করে কোন মানহানিকর দ্রব্য বিক্রয় করার শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রেও একই ধরনের শাস্তি অর্থ্যৎ, সর্বোচ্চ দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে

বাংলাদেশে মানহানি মামলাঃ

বাংলাদেশের আইনে মানহানি একটি অ-আমোলযোগ্য এবং জামীন যোগ্য অপরাধ অর্থ্যৎ এটি কোন গুরুত্বর অপরাধ নয়, কিন্তু তার পরেও কেউ কেউ এই মামলায় জামিন পাওয়া পর্যন্ত জেল খাটার নজির আছে।  বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন অনুসারে জানা যায় যে বাংলাদেশ মানহানি মামলা সাধারণ হয়রানী করার উদ্দেশ্যে করা হয়। অধিকাংশ মামলাই নিন্ম আদালতে বা আপোষের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়, উচ্চ আদালতে যাওয়ার নজির খুব কম আছে। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৯৮ ধারা অনুযায়ী, মানহানি মামলায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এবং বিশেষ ক্ষেত্রে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ছাড়া মামলা করার সুযোগ নেই। এছাড়া সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ একটি অপরাধে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও দণ্ড সমর্থন করে না। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে একজনের মানহানিতে মামলা ঠুকে দিচ্ছেন অন্যরা।অনেক সময় দেখা যায় একই ব্যক্তির নামে দেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা করা হয়।

বর্তমানে দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মানহানি মামলা হচ্ছে যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

অনলাইনেবা সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়রানির শিকার হলে কি ভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন তাজানতে আই বাটনে ক্লিক করে সাবলাইম লিগ্যাল এর এই ভিডিওটি দেখুন।

বাংলাদেশে মানহানি এবং এ সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে একটা সুনিদৃষ্ট নীতি বা আইন প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবী। বন্ধুরা আজকের সংক্ষিপ্ত ভিডিও এই পর্যন্তই, দেখা হবে পরবর্তী পোস্ট এ নতুন কোন টপিক নিয়ে, সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।


Post a Comment

0 Comments