Society, সোসাইটি, ফাউন্ডেশন, সংগঠন, সমিতি, ট্রাস্ট নিবন্ধন এর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বিস্তারিত আলোচনা | Sublime Legal

Header Ads Widget

Latest

6/recent/ticker-posts

Society, সোসাইটি, ফাউন্ডেশন, সংগঠন, সমিতি, ট্রাস্ট নিবন্ধন এর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বিস্তারিত আলোচনা | Sublime Legal

 

হ্যালো…কি অবস্থা সবার, অনেক দিন পর আবারও একটা নতুন আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হলাম। আমাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের সংগঠনের সাথে জড়িত, বিভিন্ন সামাজিক বা সেবামূলক কাজ করে থাকে্ন। তো অনেকেরই এটা প্রশ্ন, কি ভাবে একটা সংগঠন, সোসাইটি, ফাউন্ডেশন বা ট্রাস্ট এর নিবন্ধন করতে হয়। আজকের এই ভিডিওর মাধ্যমে আমারা জানব ধাপে ধাপে কি ভাবে একটা সোসাইটি বা ফাউন্ডেশনের রেজিস্টেশন করতে হয়। 

সমিতি, সোসাইটি, সংগঠন, ফাউন্ডেশন, বা ট্রাস্ট সবই প্রায় একইরকম পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে হয়।

ট্রাস্টের ক্ষেত্রে একটু ভিন্নতা রয়েছে, ট্রাস্টের নামে জমি হস্তান্তর এবং ট্রাস্টি নিয়োগ, ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের ব্যাপার-সেপার রয়েছে, তো আমরা আজকে সেদিকে যাচ্ছিনা।

ফাউন্ডেশন সাধারনত চ্যারিটেবল পারপাসে গঠন করা হয়ে থাকে, অনেক সময় মৃত ব্যক্তির নামেও করা হয়ে থাকে। যেমন ধরুন- সাজেদা ফাউন্ডেশন, অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন ইত্যাদি



সোসাইটি সাধারনত জনসেবা মূলক কাজ এবং অলাভজনক, অরাজনৈতিক সামাজিক কাজের উদ্দেশ্য গঠন করা হয়। যেমন ধরুন- বাল্য বিবাহ রোধের জন্য সচেনতামূলক একটা সংগঠন, বা বৃক্ষরোপন, বনায়ন করার উদ্দেশ্য, কিংবা অসহায় দরিদ্র লোকদের সেবা করার উদ্দেশ্যে সংগঠন কিংবা স্থানীয় কোন ক্লাব বা সমাজ কল্যান মূলক সমিতি ইত্যাদি। আপনারা স্ক্রিনে খুলনা জেলায় নিবন্ধিত কয়েকটি সোসাইটির তালিকা দেখতে পাচ্ছেন।

একটা সোসাইটি বা ফাউন্ডেশনের নিবন্ধন পাওয়ার দুইটি রাস্তা রয়েছে- একটা হল সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নেওয়া, আরেকটা হল- রেজিস্টার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানীস্‌ এন্ড ফার্মস্‌ বা আরজেএসসি থেকে নিবন্ধন নেওয়া।

আপনি যদি সীমিত আকারে বা শুধুমাত্র একটা জেলার বা কয়েকটা জেলার ভেতর আপনার কার্যক্রম চালাতে চান তা হলে আপনি জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিতে পারেন।

তবে দেশ ব্যাপি বৃহৎ পরিসরে কার্যক্রম চালাতে গেলে, বিদেশ থেকে অনুদানের অর্থ রিসিভ করতে গেলে, বিস্তৃত পরিসতে কাজ করতে গেলে আরজেএসসি থেকে নিবন্ধন নিতে হবে।

উভয় ক্ষেত্রেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া প্রায় একই রকম, তবে আরজেএসসি তে নিবন্ধনের খরচ কিছুটা বেশি।

সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনঃ-

মাজসেবা অধিদপ্তর থেকে স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৬১ ও সংশ্লিষ্ট বিধি, ১৯৬২ এর আওতায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন প্রদান করা হয়ে থাকে।

সমাজসেবা অধিদপ্তর সাধারনত ১৫ টি সমাজ কল্যান মূলক বা সেবামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য নিবন্ধন দিয়ে থাকে। আপনারা স্ক্রিনে দেখতে পাচ্ছেন-

নিবন্ধন পেতে হলে-

প্রথমে নামের ছাড়পত্র নিতে হবে, এর পর আবেদন ফি হিসাবে নির্ধারিত কোডে পাঁচ হাজার টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।

এর পর আবেদন পত্র যথাযত ভাবে পূরন করে সাথে প্রয়োজনীত যাবতীয় কাগজপত্র- যেমন-

-         সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের ছবি

-         প্রাথমিক সাধারণ সভায় নাম নির্ধারণ সংক্রান্ত কার্যবিবরণীর সত্যায়িত অনুলিপি

-         বাংলায় সংস্থার গঠণতন্ত্র

-         সাধারণ সদস্যদের নাম, পিতা, মাতা, পেশা, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা এবং নিজ স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা

-         বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচী

-         সংস্থার নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের বিবরণ

-         সংস্থার কার্যালয়ের জমির দলিল অথবা ১৫০ টাকার ষ্টাম্পে ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত অনূলিপি।

-         স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার/ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এর সুপারিশ পত্র।

এছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় আবশ্যিক কাগজপত্র, নির্ধারিত ফরম্যাটে প্রস্তুত করে জমা দিতে হবে।

আবেদন করার পর রেজিস্ট্রেশন পেতে ১ থেকে ২ মাস সময় লাগতে পারে।

আরজেএসসি থেকে নিবন্ধনঃ-

আরজেএসসি থেকে সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট- ১৮৬০ এবং অন্যান্য এস আর ও, আইন ও বিধি অনুযায়ী সোসাইওটি ও ফাউন্ডেশনের নিবন্ধন দেওয়া হয়ে থাকে। এখানে মোট ৫ টি ধাপে নিবধন্ধনের জন্য অগ্রসর হতে হয়-

প্রথম ধাপ- নামের ছাড়পত্র

প্রথমে আপনাকে একটি নামের ছাড়পত্র নিতে হবে।

নামটি ইউনিক হতে হবে অর্থ্যাৎ অন্যকেউ এই নাম পূর্বে ব্যবহার করে নাই বা এই নামে নিবন্ধন নেই নাই। অন্য কোন বসোসাইটি বা ফাউন্ডেশনের নামের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হতে পারবেনা।

নামের শেষে সোসাইটি, সমিতি বা ফাউন্ডেশন শব্দটি থাকলে ভালো হয়।

নামের ছাড়পত্র নেওয়ার বর্তমান ফিস- ১০০০ টাকা এবং ভ্যাট-১৫০ টাকা সহ মোট ১১৫০ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়।

২য় ধাপ- সোসাইটি বা ফাউন্ডেশনের গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করাঃ

 এই ধাপে আপনার সোসাইটি বা ফাউন্ডেশনের জন্য একটা গঠনতন্ত্র, সংবিধান বা মেমোরান্ডাম অফ এ্যাসোসিয়েশন তৈরি করতে হবে। এটা সবথেকে  গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস্‌।

-         এই গঠনতন্ত্রের মধ্যে আপনার সংগঠনের মিশন-ভিশন, অবজেক্টিবস্‌, লক্ষ-উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে।

-         একটা সোসাইটি নিবন্ধনের জন্য মিনিমাম ৭ জন সদদ্য থাকতে হবে।

-         এই গঠনতন্ত্রে সংগঠনের বার্ষিক সাধারন সভা অর্থ্যাৎ এ,জি,এম কবে হবে, ইজিএম কবে হবে, এই সভার কোরাম কয়জন হবে, এই সংগঠনের ওয়াইন্ডিং-আপ কিভাবে হবে, ইত্যাদি উল্লেখ থাকতে হবে।

-         এছাড়াও অন্যান্য অনেক বিষয় এর মধ্যে উল্লেখ থাকতে হবে।

-         যেহেতু এটা একটা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট তাই এটা একজন অভিজ্ঞ আইনজীবির সাহায্য নিয়ে তৈরি করাই নেওয়াই উত্তম।

৩য় ধাপ- রেজিস্ট্রেশন ফিস্‌ এবং সকল ডকুমেন্ট জমা দেওয়া

এই ধাপে এসে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন ফিস হিসাবে- ১০ হাজার টাকা, ফাইলিং ফিস- ৪০০ টাকা, ডিজিটাল সার্টিফিকেট ফিস-১ হাজার টাকা এবং সবগুলোর উপর ১৫% ভ্যাট সহ নির্ধারিত কোডে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। এটা বর্তমান ফিস রেট, এটা ভবিষ্যতে কম -বেশি হতে পারে। এবং জমার রশিদ সহ, গঠনতন্ত্র, নামের ছাড়পত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস্‌ সহ আরজেএসসিতে জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করতে হবে।

চতুর্থ ধাপ-  তদন্ত রিপোর্ট

সকল ডকুমেন্টস্‌ ঠিক থাকলে, আরজেএসসি এটা তদন্ত করার জন্য এন এস আই বা ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স এর বরাবরে লেটার পাঠাবে। অতঃপর এন এস আই আপনার সোসাইটি বা সংগঠনের ব্যাপারে তদন্ত করবে, কমিটি মেম্বার বা উদ্যোগতা যারা আছে, তাদের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন তথ্য ও ডকুমেন্ট চাইতে পারে। এনএসআই এর তদন্ত শেষ হলে, রিপোর্ট আরজেএসসিতে পাঠানো হবে।

৫ম এবং শেষ ধাপ

এই পর্যায়ে এন এস আই এর রিপোর্ট পজেটিভ থাকলে, সবকিছু চেক করে আরজেএসসি আপনার সোসাইটি বা ফাউন্ডেশনের রেজিস্ট্রেশন আবেদন টি অনুমোদন দিবে এবং সার্টিফিকেট অফ ইন-করপরেশন ইস্যু করবে। সার্টিফিকেট অফ ইন-করপরেশন পাওয়ার অর্থ হল, আপনি এখন আপনার কার্যক্রম শুরু করতে পারেন।

তো বন্ধুরা এই লেখার মাধ্যমে সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং আরজেএসসি উভয় মাধ্যমে সোসাইটি বা ফাউন্ডেশন নিবন্ধনের পদ্ধতি সম্পর্কে আলচনা করা হল, আপনারা আপনাদের সুবিধামত মাধ্যমে নিবন্ধন নিতে পারেন। এই ধরনের রেজিস্ট্রেশনে ব্যাপারে কোন ধরনের হেল্প দরকার হলে, আমাকে ইমেইল করতে পারেন- contact.sublimelegal@gmail.com

চাইলে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন, বিভিন্ন আইন-কানুন বিষয়ক কন্টেন্ট পেতে, ধন্যবাদ।

বন্ধু্রা ইনশাল্লাহ দেখা হবে পরবর্তী ব্লগে, সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।


Post a Comment

0 Comments