বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ বই লিখছেন, গান রচনা করছেন, সফটওয়্যার তৈরি করছেন, ইউটিউব ভিডিও তৈরি করছেন, কিন্তু তাদের অনেকেই জানেন না, এই কাজগুলোর উপর তাদের একটি আইনি অধিকার আছে, যার নাম কপিরাইট (Copyright)।
এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে জানব কপিরাইট কী, কিভাবে নিবন্ধন করতে হয়, এবং কেন এটি আপনার সৃষ্টিশীল ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
১। কপিরাইট কি?
কপিরাইট হলো একটি আইনি অধিকার, যা কোনো সৃষ্টিশীল কর্মের মালিকানা ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদান করে। আপনি যদি কোনো লেখা, ছবি, গান, মিউজিক, চিত্রকর্ম, নাটক, চলচ্চিত্র, সফটওয়্যার, লোগো বা শিল্পকর্ম তৈরি করেন, তাহলে সেই কাজের একমাত্র মালিক আপনি। কেউ আপনার অনুমতি ছাড়া সেটি ব্যবহার, বিক্রি, বা অনুলিপি করলে তা কপিরাইট লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে। বাংলাদেশে কপিরাইট বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হয় “বাংলাদেশ কপিরাইট আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৫ ও ২০১৯)” অনুযায়ী।
২। কপিরাইট নিবন্ধন কেন করবেন?
যদিও আপনি কাজটি তৈরি করার মুহূর্ত থেকেই কপিরাইটের মালিক হন, কিন্তু নিবন্ধন করলে এটি আইনি প্রমাণ হিসেবে কার্যকর হয়।
কোনো বিরোধ বা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে আদালতে প্রমাণ দিতে নিবন্ধন সনদ সবচেয়ে শক্তিশালী ডকুমেন্ট।
এছাড়া নিবন্ধিত কপিরাইট আপনাকে দেয়ঃ
- আইনি সুরক্ষা
- বাণিজ্যিক ব্যবহারের অধিকার
- কাজ বিক্রির বা লাইসেন্স দেওয়ার সুযোগ
- জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি
৩। কপিরাইট নিবন্ধন না করলে কি ক্ষতি হতে পারে?
- আপনার কাজ কেউ কপি করলে প্রমাণ করা কঠিন হবে যে এটি আপনার সৃষ্টি।
- আপনি কোনো আইনি প্রতিকার পাবেন না বা অনেক সময়সাপেক্ষ হবে।
- অন্য কেউ আপনার কাজ নিজের নামে নিবন্ধন করলে আপনি মালিকানা হারাতে পারেন।
৪। কি ধরনের কর্মের কপিরাইট নিবন্ধন করা যায়?
বাংলাদেশ কপিরাইট আইন অনুযায়ী নিম্নলিখিত কর্মসমূহের কপিরাইট নিবন্ধন করা যায়:
- সাহিত্যকর্ম (গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিক্ষা সহায়িকা ইত্যাদি)
- নাটক, চিত্রনাট্য, কবিতা
- সঙ্গীত, গানের লিরিক্স ও সুর
- চলচ্চিত্র, ভিডিও, ইউটিউব কনটেন্ট, ওয়েবসাইট কন্টেন্ট
- শিল্পকর্ম, ছবি, পেইন্টিং, ডিজাইন
- সফটওয়্যার, অ্যাপ
- লোগো, জিঙ্গেল, বিজ্ঞাপন স্ক্রিপ্ট
৫। কপিরাইট কিভাবে করবেন?
বাংলাদেশে কপিরাইট নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হয় বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে, যা অবস্থিত আগারগাঁও, ঢাকা।
আবেদনের ধাপগুলো নিম্নরূপ:
- নির্ধারিত আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
- কপিরাইট করতে চাওয়া কাজের দুইটি কপি বা নমুনা (হার্ড কপি এবং সফট কপি) জমা দিতে হয়।
- ফি জমা দিতে হয় ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে বা অনলাইনে।
- আবেদন যাচাইয়ের পর কপিরাইট অফিস সনদ প্রদান করে।
৬। কপিরাইট নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- আবেদন ফর্ম
- কাজের কপি (বই, অডিও, সফটওয়্যার ইত্যাদি)
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট
- ২ কপি ছবি
- আবেদন ফি জমার চালান
- প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মালিকানা ঘোষণাপত্র
- অঙ্গীকার নামা
- ক্ষমতা অর্পন পত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- প্রচ্ছদ কর্মের হস্তান্তর পত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- আবেদন কারীর স্বাক্ষর
- কর্মের সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য পক্ষের অনাপত্তি পত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
৭। কপিরাইট সনদ পেতে কত সময় লাগে?
সাধারণত কপিরাইট অফিস যাচাই-বাছাই শেষে ৪৫–৯০ দিনের মধ্যে সনদ প্রদান করে।
যদি কোনো আপত্তি বা যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে সময় কিছুটা বাড়তে পারে।৮। কপিরাইট নিবন্ধনের খরচ কত?
সরকারি নির্ধারিত ফি কাজের ধরন অনুযায়ী ১,০০০৳ টাকা থেকে ১,৫০০৳ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া অন্যান্য ডকুমেন্টস্ প্রস্তুত করা এবং আবেদন করার জন্য কাজের ধরন অনুযায়ী অর্থ খরচ হয়।
যদি আপনি Sublime Legal-এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ প্রফেশনাল সহায়তা চান, তবে আমরা আবেদন প্রস্তুতি, ফি জমা, ও সনদ সংগ্রহ সব ধাপেই সহায়তা করি।
৯। কপিরাইট সংক্রান্ত আইন-কানুন
বাংলাদেশে প্রযোজ্য মূল আইন হলো “বাংলাদেশ কপিরাইট আইন, ২০২৩" এবং "কপিরাইট বিধিমালা ২০০৬"। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ Berne Convention, TRIPS (Trade-Related Aspects of Intellectual Property Rights) Agreement, এবং WIPO (World Intellectual Property Organization) এর সদস্য দেশ, যার ফলে অন্তর্জাতিক পর্যায়েও কপিরাইট সুরক্ষা পাওয়া যায়।
১০। কপিরাইট করলে আপনি কি ধরনের আইনি সুরক্ষা পাবেন?
- আপনার কাজ অননুমোদিতভাবে ব্যবহার করলে মামলা করা যাবে।
- ক্ষতিপূরণ দাবি করা যাবে।
- কপি বা পাইরেটেড কনটেন্ট বাজেয়াপ্ত করা যাবে।
- আন্তর্জাতিক সুরক্ষা পাওয়া যাবে, অর্থাৎ বিদেশেও আপনার কপিরাইট বৈধ থাকবে।
১২। কপিরাইট লঙ্ঘনের আইনি শাস্তি
বাংলাদেশ কপিরাইট আইন, ২০২৩-এর ৬ষ্ঠ ও ৭ম অধ্যয়ে কপিরাইট লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দেওয়ানী ও ফৌজদারি প্রক্তিকার রয়েছে।
- অননুমোদিত কপি বা বিক্রির জন্য ৬ মাস থেকে ৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
- ৫০,০০০ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
- আদালত কাজটি বাজেয়াপ্ত ও ধ্বংসের নির্দেশ দিতে পারে।
- চলচিত্রের কপিরাইট লঙ্ঘন করলে অনধিক ৫ বছরের কারাদন্ড এবং অনধিক ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে।
- দ্বিতীয় বার একই অপরাধ বা কপিরাইট সংক্রান্ত অপরাধ করিলে দ্বিতীয় এবং তৎপরবর্তী প্রত্যেক অপরাধের জন্য ৫ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস (Department of Patents, Designs and Trademarks-এর অধীনে) এ বিষয়টি পরিচালনা করে। বিরোধ বা লঙ্ঘনের মামলা সাধারণত কপিরাইট বোর্ড বা সিভিল কোর্টে দাখিল করা হয়।
১৩। কপিরাইট ও রিলেটেড রাইটস কি?
কপিরাইট মূল সৃষ্টিকর্তার অধিকার।
রিলেটেড রাইটস (Related Rights) হলো পারফর্মার, প্রডিউসার, বা সম্প্রচারকের অধিকার।
যেমন কোনো গান গাইলে গায়ক, প্রযোজক ও সম্প্রচার মাধ্যম তিনজনেরই আলাদা রিলেটেড রাইটস থাকে।
উপসংহার
কপিরাইট শুধু আইনি সুরক্ষা নয়, এটি একজন সৃষ্টিশীল মানুষের পরিচয় ও সম্মানের প্রতীক।আপনার পরিশ্রম ও মেধার কাজ অন্য কেউ যেন ব্যবহার না করতে পারে, সেই নিশ্চয়তা দেয় কপিরাইট নিবন্ধন।
আইনি পরামর্শ ও কপিরাইট নিবন্ধন সেবা
আপনার যাবতীয় কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে পেইড লিগ্যাল কনসালটেন্সি বা প্রফেশনাল সার্ভিসের জন্য এখুনি যোগাযোগ করুন
✉️ contact.sublimelegal@gmail.com
✉️ info@sublime-legal.com
📱 WhatsApp: +880 1303577894
📱 WhatsApp: +880 1718710068
🌐 www.sublime-legal.com | www.sublimelegalbd.com


0 Comments